ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে ২৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার (পিকে) হালদারের আরেক বান্ধবী শুভ্রা রানী ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।  বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার তথ্যে সোমবার রাজধানীর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে।  পি কের এই বান্ধবীকে গ্রেফতারের পর বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

শুভ্রা রানী ওয়াকামা লিমিটেডের পরিচালক ও পিকে হালদারের দুর্নীতির সহযোগী।  প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সুব্রত দাস শুভ্রা রানীর স্বামী।  এই দুজন পি কের সঙ্গে মিলেমিশে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।  সেই টাকা পাচার করতেই যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন।

দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, শুভ্রা রানী ও তার স্বামী সুব্রত দাস পিকের সঙ্গে মিলেমিশে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।  তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাদের সম্পদের বিষয়েও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

জানা যায়, শুভ্রা রানী ঘোষ ও সুব্রত দাস দম্পতি উত্তরার-১৩ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িতে থাকেন। তাদের অস্থায়ী ঠিকানা যশোরের মনিরামপুর উপজেলার মোবারকপুর গ্রামে।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে আত্মসাৎ করা ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচারে বারবার দেশত্যাগ করেছিল এই দম্পতি।  দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সুব্রত দাস গত তিন বছরে পাঁচবার আমেরিকায় ভ্রমণ করেছেন।

অর্থ পাচারে এ দম্পতির বিদেশ ভ্রমণের বেশকিছু নথিপত্র এসেছে দুদকের হাতে। যার মাধ্যমে দুদক প্রাথমিকভাবে মনে করছে অর্থ পাচার করতেই তাদের এতবার বিদেশ ভ্রমণ।  স্ত্রী দেশে ফিরলেও ফেরেননি স্বামী সুব্রত।  যদিও মামলার কথা জানতেন না সুব্রত ও শুভ্রা দম্পতি।  সে কারণে দেশে ফিরেই দুদকের হাতে গ্রেফতার হলেন শুভ্রা রানী ঘোষ।  শুভ্রার স্বামীকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, তিন মাস আগে শুভ্রা ও তার স্বামী আমেরিকায় যান।  প্রাথমিকভাবে দুদকের কাছে শুভ্রা দাবি করেন, তিনি আমেরিকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন। তবে দুদকের সন্দেহ মূলত আত্মসাৎ করা টাকা পাচার করতেই তাদের এতবার আমেরিকায় ভ্রমণ। আলোচিত পিকে হালদারের সহযোগিতায় আত্মসাৎ করা ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই গিয়েছে এই দম্পতির পকেটে।

শুভ্রা রানী কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে চেলে যান।  যদিও তিনি এবং তার স্বামীর বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দুদক থেকে পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়।  তবে তার আগেই তিনি বিদেশে পাড়ি জমান।  সোমবার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

অতি গোপনে কাতার এয়ারওয়েজের একটি বিমানে দেশে ফিরছিলেন শুভ্রা রানী ঘোষ।  দুদকের কাছে তথ্য ছিল তিনি আবার দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। সোমবার বিমানবন্দরে পৌঁছার পরই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন টিম তাকে গ্রেফতার করে।  শুভ্রা রানীর স্বামী সুব্রত দাসসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য দুদকের অভিযান চলছে।  মামলা হওয়ার পর অনেকেই আত্মগোপনে চলে গেছেন।

এদিকে দুদক সূত্র জানায়, রোববার ছয় প্রতিষ্ঠানের নামে জালিয়াতি করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের নামে ছয় মামলা করা হয়। এর আগে পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নামে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে ৫টি মামলা হয়। সেই পাঁচ মামলায় পিকে হালদারসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছিল।